শীতে চুলের যত্ন নেওয়ার কিছু অনবদ্য উপায় রইল আজ আপনাদের সামনে। এই শীত কালে ত্বককে সাথে সাথে চুলের যত্নে প্রতি যত্ন নিতে হবে। কিছু সমস্যার সমাধান তুলে ধরা হলো:
১. খুশকির সহজ সমাধান :
শীত মানেই চুলে আর স্ক্যাল্পে আর্দ্রতার অভাব। আর তার ফলে মরা চামড়ার প্রকোপ বৃদ্ধি হওয়া তো সাধারণ ঘটনা। খুশকির সমস্যা যদিও আমাদের সারা বছরের সমস্যা, তাও এই শীতের সময়ে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
আর সবচেয়ে সমস্যা হয় এই সময়ে আমরা খুশকি আর মরা চামড়া এই দুইয়ের পার্থক্য করতে পারি না। একটু মাথা ঝাড়লেই মরা চামড়া আর খুশকি চুল থেকে ঝরে ঝরে পড়ে, যা খুবই দৃষ্টিকটু লাগে। কিন্তু এই সব সমস্যা, মূলত খুশকির সমস্যা থেকে সহজেই বেরিয়ে আসা যায়। এর জন্য সামান্য কয়েকটি জিনিসই লাগবে।

উপকরণঃ
৪ চামচ অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল
১ চামচ পাতিলেবুর রস
পদ্ধতিঃ
পছন্দ মতো তেল নিয়ে হাল্কা গরম করে নিন। খুব বেশি গরম করার দরকার নেই। হাল্কা করে একটু উষ্ণ করে নিলেই হবে। যে তাপমাত্রায় আপনি চুলে ওই তেল দিতে পারবেন হাত দিয়ে ধরে সেই তাপমাত্রা পর্যন্ত গরম করে নিন।
তারপর এই গরম তেলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ চুলে আর স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে রেখে দিন ২০ মিনিট মতো।
তারপর কোনও মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। অবশ্যই কোনও ভাল কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন শ্যাম্পু করা হয়ে যাওয়ার পর।
এতে খুশকির সমস্যা অনেক কমবে। এটি সপ্তাহে তিন দিন করতে পারেন ভাল ফল পাওয়ার জন্য।

২. জমাট বাঁধা চুলের সমস্যায়
চুলের জমাট বাঁধা
শীতে চুলের আরেক সমস্যা হল চুল জমাট বেঁধে থাকে। মূলত এই জমাট বেঁধে চুলের মসৃণতা হারিয়ে গেলে , একে অন্য কোথায় ফ্রিজ হেয়ার বলে । এর থেকে চুল কিন্তু অনেক সময়ে পড়েও যায়।
এই সমস্যার সমাধান রয়েছে।
তার জন্য দরকার একটি মোটা বড় দাঁতের চিরুনি। আগে একটি প্লাস্টিকের বড় দাঁতের চিরুনি নিন। এই চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান। তবে ওই জট আর পেতে বসা চুল আস্তে আস্তে আগের অবস্থায় ফিরবে।
তারপর হাল্কা গরম জলে মাথা ধুয়ে নিন। সঙ্গে অবশ্যই হাল্কা কোনও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। কন্ডিশনার দিয়ে ১০ মিনিট মতো অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা জলে ভাল করে চুল ধুয়ে নিন।
এবার চুল শুকিয়ে গেলে দেখবেন চুল একদম ফুরফুর করছে।

৩. উজ্জ্বলতা কমে গেলে :
শীতে যেহেতু চুলে আর্দ্রতা থাকে না, তাই চুল শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চুলের উজ্জ্বলতাও কমে যায়। এখন চুলের সেই উজ্জ্বলতা বজায় রাখার জন্য কি করবেন! হাতের কাছে থাকা একটি সহজ জিনিসই আপনাকে এই সমস্যা থেকে উদ্ধার করবে।
উপকরণঃ
একটি বড় দাঁতের চিরুনি
মধু
পদ্ধতিঃ
চুল গুলো আগে ভাল করে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিন। তারপর শুধু মধু নিয়ে চুলের বিনুনি বরাবর লাগিয়ে নিন আর একটি শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে নিন। এভাবে থাকুন প্রায় ৩০ মিনিট পর্যন্ত।
তারপর অল্প উষ্ণ পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এটি সপ্তাহে তিন দিন পর্যন্ত করতে পারেন। মধু চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখে খুব ভাল করে। আর আর্দ্রতা থাকলেই চুল থাকবে সুন্দর আর উজ্জ্বল।
৪. সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য
চুলের সার্বিক ভাল রাখার এক এবং একমাত্র উপায় হল তেলের ম্যাসাজ। এর কিন্তু কোনও বিকল্প নেই চুল সব দিক থেকে ভাল রাখার জন্য। তেল ম্যাসাজ করলে সবার আগে আপনার স্ক্যাল্পের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
এর ফলে অক্সিজেনের যোগান বাড়ে আর চুল অনেক বেশি মজবুত হয়ে ওঠে। আর সেই তেল যদি হয় অলিভ অয়েল তাহলে তো কথাই নেই। অলিভ অয়েল এই শীতে শরীরে মাখার পাশে চুলেও ব্যবহার করুন। ফল দেখে আপনিও অবাক হয়ে যাবেন।

উপকরণঃ
৩ চামচ অলিভ তেল
পদ্ধতিঃ
প্রথমে অলিভ ওয়েল অল্প গরম করে নিন। তারপর সেই তেল হাল্কা হাতে চুলে ম্যাসাজ করুন। এতে চুল আস্তে আস্তে স্ক্যাল্পের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করবে। এর ফলে চুলের গোড়া শক্ত হবে, চুল মজবুত হবে, মাথা ঠাণ্ডা থাকবে।
স্ক্যাল্পের মধ্যে রক্তের সঞ্চালন ভাল হবে। এই তেল মেখে আপনি সারা রাত রেখে দিতে পারেন। পরের দিন মাইল্ড শ্যাম্পু বা বেবি শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিন।প্রথমে অলিভ তেল নিয়ে অল্প গরম করে নিন। খুব বেশি গরম করবেন না। এতে অলিভ তেলের গুণ নষ্ট হয়ে যাবে। আর অলিভ তেল খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায়।
তারপর সেই তেল হাল্কা হাতে চুলে ম্যাসাজ করুন। এতে চুল আস্তে আস্তে স্ক্যাল্পের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করবে। এর ফলে চুলের গোড়া শক্ত হবে, চুল মজবুত হবে, মাথা ঠাণ্ডা থাকবে। স্ক্যাল্পের মধ্যে রক্তের সঞ্চালন ভাল হবে।
এই তেল মেখে আপনি সারা রাত রেখে দিতে পারেন। পরের দিন মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন
৫. ড্রায়ার ব্যবহারে সাবধানতা :
শীতে চুল শুকিয়ে নিতে একটু বেগ পেতে হয়। যেহেতু পাখা চলে না, তাই চুল শুকিয়ে যেতে অনেক সময় লাগে। আর সব সময়ে রোদে গিয়ে চুল শুকিয়ে নেওয়ার সময় তো আর হয় না। এই ক্ষেত্রে আমরা ড্রায়ারের দিকে ঝুঁকি বেশি। কিন্তু মনে রাখবেন, ভিজে চুল থাকা অবস্থায় কখনোই ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না। এতে চুলের জন্য ক্ষতি সাধিত হবে।
সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় চুলে জট পাকিয়ে যাওয়ার আর চুল ছিঁড়ে যাওয়ার। খুব ভাল হয় যদি চুলের অতিরিক্ত জল আপনি আগে কোনও টাওয়েল দিয়ে মুছে নিন টাওয়েল দিয়ে চুল আস্তে আস্তে চিপে নিন।তারপর ড্রায়ার ব্যবহার করে চুল শুকিয়ে নিলে কোনও সমস্যা হবে না। এই ক্ষেত্রেও ব্লো ড্রায়ার কুল সেটিং-এ রেখে ব্যবহার করবেন।
বেশি গরম তাপ যেন ড্রায়ার থেকে চুলে না যায়। আর চুল এবং ড্রায়ারের মধ্যে অন্তত যেন ১৫ সেন্টিমিটারের দূরত্ব থাকে। এতে চুল শুকিয়েও যাবে, চুল ক্ষতিও হবে না।
এসকল নির্দেশনা অনুযায়ী চুলের যত্ন নিলে অবশ্যই আপনার চুল সুন্দর এবং চুল পরার দুশ্চিন্তাও দূর হবে