বাচ্চাদের ভালোবাসে না এমন কেউ হয়তো পৃথিবীতে নেই,সবাই চাই সন্তানের মা হতে। ঠিক তেমনি
ছোট থেকেই শি’শুদের ভাল লাগত নিতা আম্বানির। স্বপ্ন দেখতেন মা হওয়ার। সন্তানদের কী’ ভাবে লালনপালন করতে চান, এই নিয়ে কিশোরী বয়স থেকে তার জল্পনা কল্পনা।
অথচ তাঁর সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমা’র হয়ে গিয়েছিল ,বিয়ে হয়ে বউ হয়ে মুকেশ আম্বানি ঘরে উঠেন তখন মাত্র ২৩ বছর বয়সে। যখন তিনি জানতে পারলেন, কোনওদিনই তাঁর মা হওয়া সম্ভব নয় ,তখন তার আকাশ যেনো মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

১৯৮৫ সালে ভারতের সবচেয়ে ধনী পরিবারে বিয়ে হয় নীতা অম্বানীর। বিয়ের ঠিক এক বছর পর এক চিকিৎসকই তাঁদের প্রথম এই দুঃখের খবরটা দেন।
প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছিলেন নীতা। স্বামী মুকেশ অম্বানী সব সময়েই তাঁর পাশে ছিলেন। পাশে পেয়েছিলেন তাদের দুই পরিবারকেও। কিন্তু স্বপ্ন যখন ভেঙে যায়, তা মানিয়ে উঠতে অনেক মানসিক যন্ত্র’ণা সহ্য করতে হয় সকলেরই।
এর পর থেকেই শুরু হয় নীতার জীবন সংগ্রামের সবচেয়ে কঠিন সময়। অনেক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পর নীতা এবং মুকেশ একটি বড় সিদ্ধান্ত নেন ,অর্থাৎ তারা অবশেষে স্থির করেন আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান নেওয়ার। ঘটনাটি ১৯৮৬ সালে, সে সময় বর্তমান যুগের মতো আইভিএফ এতটা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেনি মানুষের কাছে। ক’জন মানুষই বা আইভিএফ স’ম্পর্কে জানতেন!
তাঁদের আইভিএফ-এর কথা প্রথম বলেছিলেন পারিবারিক বন্ধু এবং চিকিৎসক ফিরুজা পারিখ। কড়া ওষুধ আর উন্নত প্রযু’ক্তির মাধ্যমে শুরু হয় তাঁদের চিকিৎসা।

অনেক চেষ্টার পর বিয়ের প্রায় সাত বছর পর প্রথম অন্তঃসত্ত্বা হন নীতা। যে দিন নীতা জানতে পেরেছিলেন এই খবরটা, সেটাই বোধহয় তাঁর জীবনের সেরা মুহূর্ত হয়ে থেকে যাবে চিরকাল। সুখটা যেনো এখানেই থামেনি, অফুরন্ত সুখ হয়ে এসেছিল নীতা-মুকেশের জীবনে। কারণ তিনি জানতে পারে তার কোল জুড়ে আসছে যমজ সন্তান। তাঁর গর্ভে যমজ সন্তান বড় হচ্ছিল ধীরে ধীরে। অনেক সাবধানতা ছিল। এই পুরো সময়টাই তাই চিকিৎসকের কথার এতটুকু নড়চড় করেননি তিনি।
১৯৯১ সালে ঈশা এবং আকাশের জন্ম দেন নীতা। অম্বানী পরিবারে খুশির আলো জ্বলে ওঠে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনন্দ পিরামলকে বিয়ের এক বছর পর এক সাক্ষাৎকারে নিজেই এ কথা জানিয়েছিলেন ঈশা অম্বানী।

ঈশা বলেছিলেন, “আমি আর আমার ভাই আকাশ দুজনেই যমজ। আইভিএফ পদ্ধতিতে হয়েছি। বিয়ের সাত বছর পর আমাদের বাবা-মায়ের সন্তান হয়।” ঈশা এও জানান, সন্তানদের লালনপালনে যাতে কোনও অভাব থেকে না যায়, তার জন্য তাঁদের মা নীতা কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের পাঁচ বছর বয়স হওয়ার পর ফের কাজে যোগ দেন নীতা।

ঈশা এবং আকাশের জন্মের কয়েক বছর পর, ১৯৯৫ সালে অম্বানী পরিবারের ছোট ছে’লে অনন্ত অম্বানীর জন্ম দেন নীতা। নীতা-মুকেশের এই সন্তান অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই জন্ম নিয়েছিলেন।
নীতার গর্ভে যখন প্রথম যমজ সন্তান আসে, নীতার তখন ৪৭ কেজি ওজন ছিল, তারপর তিনি দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিলেন। ৯০ কেজি ওজন হয়ে গিয়েছিল তাঁর। নীতা কিন্তু তখন একেবারেই নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্যের কথা ভাবেননি। সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে তিনি আপ্রা’ণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন। ঈশা এবং আকাশ দুজনেই প্রিম্যাচিওর বেবি। পরিপূর্ণ গর্ভাবস্থার দু’মাস আগেই তাঁদের জন্ম হয়েছিল। তাঁদের জন্মের পর নির্দিষ্ট ডায়েট এবং নিয়মিত ব্যায়াম করেই অ’তিরিক্ত ৫৮ কেজি মেদ ঝরিয়েছেন তিনি।

নিজের সংসারের প্রতি কতটা যত্নশীল নীতা? তা হয়তো এখন তার সন্তানদের দেখেই বুঝা যায়! তিনি আজও সুন্দর ভাবে কাজ এবং সংসার সামলে চলেছেন। নীতা তাই তাঁর ছে’লেমে’য়েদের চোখে ‘টাইগার মম’।