রুপচর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করা। অনেকে মনে করেন, ত্বক প্রতিদিন ফেইস ওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করলেই ক্লিন হয়ে যায়,আবার নতুন করে কি পরিষ্কার করবো? কিন্তু আপনি জানেন কি, ত্বক পরিষ্কারের উপর ত্বকের সুস্থতা নির্ভর করে? ত্বকের ধরন অনুযায়ী ত্বক পরিষ্কার করাও একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে । তৈলাক্ত, শুষ্ক, নরমাল কিংবা সেনসিটিভ ত্বক- একেক ত্বক পরিষ্কার করার উপায় একেক রকম। এমনকি ত্বকের ধরণ অনুযায়ী পার্থক্য রয়েছে ফেইস ওয়াশেরও। তৈলাক্ত এবং শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিয়ে কম বেশি সবাই সচেতন। কিন্তু নরমাল স্কিন নিয়ে অনেকে সচেতন নয়। অথচ নরমাল ত্বকের যত্ন নেওয়া বেশি সহজ। ত্বকের যত্নে এই সহজ কাজটি আরো সহজ করে দেবে আজকের প্রতিবেদন।

নরমাল ত্বকের যত্ন কিছু টিপস
১. সকাল এবং রাতে ত্বক ক্লেনজার দিয়ে পরিষ্কার করুন। বিশেষ করে মেকআপ করার পর অবশ্যই ক্লেনজার দিয়ে মুখ ক্লিন করে নিবেন।
২. মুখ ধোয়ার পর সকালে এবং রাতে , ফেইসে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
৩. সপ্তাহে একবার ত্বক এক্সফলিয়েট করুন ভালো কোনো স্ক্রাব দিয়ে।
৪. স্কিন মাস্ক সপ্তাহে এক বা দুইবার ব্যবহার করুন। বিশেষ করে এক্সফলিয়েশন বা স্ক্রাব-এর পর ত্বকে একটি ফেইস প্যাক ব্যবহার করুন।
৫. দিনেরবেলায় রোদে যাওয়ার সময় অব্যশই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন কিংবা এসপিএফ সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজারও ব্যবহার করতে পারেন।

ত্বকের ক্লেনজার :ত্বক বিশেষ পরিষ্কার করার স্বার্থে সাধারণত সবাই ক্লেনজার ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু সব ক্লিনজার ত্বকের ভিতর থেকে ময়লা দূর করে না, আবার কিছু কিছু ক্লিনজার ত্বক পি এইচ ব্যালান্স নষ্ট করে তোলে ,যার ফলে ত্বকের ভিতরে ময়েশ্চারাইজার পরিমাণ কমে আসে এবং ত্বক শুষ্ক হয়ে উঠে । বিভিন্ন কারণে অনেকেই বাজারের ক্লেনজারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক ক্লেনজার ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করেন।
তাই আজ প্রাকৃতিক কিছু টিপস নরমাল ত্বকের ক্লেনজার জন্য।

*টকদই –
টকদই নরমাল ত্বকে বেশ ভালোভাবে খাপ খাইয়ে যায়। কিছু পরিমাণ টকদই নিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করে ব্যবহার করুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি শুধু ত্বক পরিষ্কার করবে তা কিন্তু নয়, ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সক্ষম এবং টকদই বেশ কার্যকরী।
* ক্লিনজার হিসেবে টক দই এবং মধু –
নরমাল ত্বকের জন্য টকদই এবং মধু একটি আর্দশ ফেইস প্যাক। দুই চা চামচ টকদই এবং এক চা চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি ত্বকে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করে লাগান। প্যাকটি ২-৩ মিনিট ত্বকে ম্যাসাজ করুন। ৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ত্বক।
* ডিম এবং মধু –
ফ্রেশ এবং সুন্দর ত্বকের জন্য প্রয়োজন প্রোট্রিন এবং ভিটামিন। আর প্রোট্রিনের মূল উৎস হলো ডিম। মধু আর ডিমের এই প্যাকটি আপনার ত্বককে করে তুলবে আরো বেশি মসৃণ এবং সতেজ। একটি পাত্রে একটি ডিমের সাদা অংশ এবং এক চা চামচ মধু নিন। এই দুটি উপাদান খুব ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন। এই মিশ্রণের সাথে কিছু পরিমাণ কাঠবাদামের পেস্ট মিশিয়ে নিন। এই প্যাকটি ত্বকে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করে লাগান। এই প্যাকটি স্ক্রাব হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন। ১০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বক পরিষ্কার করার সাথে সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে কারণ কাঠবাদাম এবং ডিম একসাথে স্কিনের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি সহায়তা করে।
* প্রস্তুতকৃত আপেল ফেইস প্যাক –
ফল হিসাবে আপেলের পুষ্টিগুণের কথা সবার জানা। ত্বক পরিষ্কারক হিসাবে এই আপেল দারুণ কাজ করে। একটি আপেল সিদ্ধ করে নিন। একটি কাঁটা চামচ দিয়ে সিদ্ধ আপেলটি ভালো করে ম্যাশ করুন। এরপর এরসাথে এক চা চামচ ক্রিম, এক চা চামচ অলিভ অয়েল এবং এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি ত্বকে ব্যবহার করুন। ১০ মিনিট এই প্যাকটি ত্বকে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। আর পেয়ে যান ক্লিন, ফ্রেশ এবং উজ্জ্বল ত্বক।
* মধু এবং লেবুর রস –
লেবু ত্বক পরিষ্কার করে এবং মধু ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে থাকে। মধু এবং লেবুর রস পারফেক্ট ক্লেনজার। মধুর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে মধু এবং লেবুর এই মিশ্রণটি। দুই চা চামচ মধু এবং এক চা চামচ লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি মুখ এবং ঘাড়ে ব্যবহার করুন। মিশ্রণটি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।এই ৫টি সাধারণ ত্বকের ক্লেনজার নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক থাকবে সুস্থ ও সুন্দর। আর ত্বকে পেয়ে যাবেন অন্যরকম একটি গ্লো, যা আপনি সবসময় চেয়েছিলেন।